কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের লিংক রোড চেকপোস্ট পেরিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে বনের গাছ। ফার্নিচার ও চিরাই কাঠ, এ নিয়ে কোন ভূমিকা নেই বনবিভাগের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাসোহারা পেয়ে নিরব রয়েছে বনবিভাগ। এতে জড়িত রয়েছেন খোদ লিংক রোড বিট কাম চেক ষ্টেশন কর্মকর্তা সোহেল হোসাইন ।অবশ্য তিনি দাবী করেছেন উর্ধতন বন কর্মকর্তাদের নজরদারিতে যত সব অনিয়ম করা হচ্ছে। .
জানা যায় , কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জের অধিনে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের লিংক রোড বনবিট কাম চেক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি কাঠ। লিংক রোড বনবিট কাম চেক স্টেশনে অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতিরাতেই পাচার হচ্ছে কাঠ। কাঠ পাচারে দৈনিক এক থেকে দেড় লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। অভিযোগ উঠেছে মাসোহারা পেয়ে চুপ থাকছে বনবিভাগ। এতে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিশাল বনভূমি দিনে দিনে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।.
সরেজমিনে পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বনবিভাগ এবং স্থানীয় কাঠচোর সিন্ডিকেটের দ্বিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক পরিমাণ কাঠ পাচার হয় টেকনাফ -কক্সবাজার সড়কের লিংক রোড চেক স্টেশন দিয়ে। ফলে অবাধে বৃক্ষ নিধনে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও শংকা দেখা দিয়েছে।.
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বনাঞ্চল গুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্যতম প্রধান ধরন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে অবৈধভাবে কাঠ সংগ্রহ ও পাচার। এর ফলে বনাঞ্চল একদিকে যেমন বন উজাড় হচ্ছে, তেমনি সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । .
কক্সবাজারের বনাঞ্চলগুলো কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বিরান ভুমিতে পরিণত করেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।এদিকে, উখিয়া, রাজারকুল , ধোয়াপালং,খুনিয়াপালং, পানেরছড়া, থেকে কাঠ লিংক রোড চেক অতিক্রম করে। কক্সবাজার শহরে, বাংলাবাজার, খরুলিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় চোরাই কাঠ, ফার্নিচার ও চিরাই কাঠ ভর্তি পিকআপ, ট্রাক যুগে যাচ্ছে লিংক রোড চেক স্টেশন পেরিয়ে। দেখা যায় মাঝে মধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ ও উওর বনবিভাগের বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক, পিকআপ আটক করলেও সিংহভাগ কাঠ আত্মসাত ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আটক গাড়ী পরে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। .
কক্সবাজার লিংক রোড চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিনই ভ্যানগাড়ি পিকআপ, ট্রাক এমনকি টলীতে করেও হাজার হাজার টাকার মূল্যবান সেগুন কাঠ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়া চেকপোস্ট অতিক্রম করতে দেখা যায়। মাঝে মধ্যে তাদের নির্ধারিত উৎকোচ না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠবাহী গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখে। .
পরে স্টেশন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদা মাফিক টাকা দিয়ে স্টেশন অতিক্রম করতে হয়। প্রতিদিন লিংক রোড চেক পোস্টের বন কর্মচারীরা এভাবেই লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। আবার সন্ধ্যার পর যেসব অবৈধ সেগুন কাঠভর্তি ট্রাক আসে সেগুলোর চাঁদার অংক দ্বিগুণ। এসব গাড়িকে লিংক রোড চেকপোস্ট অতিক্রম করতে ডিউটিরত বন কর্মকর্তাদে দিতে হয় চাহিদা মতো টাকা। .
টেকনাফ বন্দর থেকে আসা বাণিজ্য চুক্তির গাছ ভর্তি প্রতি ট্রাক ২ ০০০ টাকা, টিপির কাঠ ভর্তি প্রতি ট্রাক থেকে ৩০০০ টাকা। রোয়াংছড়ি থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়া টিপির বাঁশ ভর্তি প্রতি গাড়ী ট্রাক থেকে ২০০০ টাকা। চলাচল পাস টিপি চেকিং এর নামে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে টাকাগুলো আদায় করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে টিপির বাইরে অতিরিক্ত অবৈধ কাঠ পাচারও হচ্ছে। .
এভাবে দৈনিক ১-২ লাখ টাকার মতো চাঁদাবাজি হচ্ছে লিংক রোড বিট কাম চেক স্টেশনে। অথচ অবৈধ কাঠ পাচার রোধে লিংক রোড চেক স্টেশন বসানো হলেও চেক স্টেশন পাচার রোধের পরিবর্তে কাঠ পাচারের সহযোগিতা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। কয়েকজন কাঠ ও বাঁশ ব্যবসায়ী জানান, ট্রান্সপোর্ট পারমিশন বা টিপি থাকার পরও লিংক রোড চেকপোস্টে কর্মকর্তারদেরকে নির্ধারিত হারে গাড়ি পতি চাঁদা দিতে হয়। .
এব্যপারে বিট কর্মকর্তা সোহেল হোসাইন বলেন, সড়কে কাঠ পাচার রোধে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে সরকারি ভাবে টাকা নেওয়ার পারমিশন নেই। জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা। তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হবে।. .
ডে-নাইট-নিউজ / আমানউল্লাহ আনোয়ার কক্সবাজার
আপনার মতামত লিখুন: